আমরা তিন ধরনের গ্রাফ লক্ষ্য করি।একটা একমাত্রিক গতির বর্ণনার জন্য, আরেকটা দ্বিমাত্রিক গতির বর্ণনার জন্য এবং অন্যটা ত্রিমাত্রিক গতির বর্ণনার জন্য।


একমাত্রিক গতি বর্ণনার গ্রাফ
এই গ্রাফটা ব্যবহার হবে উসাইন বোল্টের সোজাপথে ১০০ মিটার দৌড়ের বর্ণনার জন্য। ( অর্থাৎ সরলরৈখিক গতির বর্ণনার জন্য ) খেয়াল করে দেখতে হবে আমি কিন্তু বলেছি সোজাপথে বা সরলরৈখিক পথে দৌড়ের কথা। এথলেটিক্স ট্র্যাকে ২০০ মিটার, ৪০০ মিটার বা ততোধিক মিটার দৌড়ের জন্য বক্রপথ ব্যবহার করা হয়। সেই বক্রপথ বর্ণনার জন্য এই গ্রাফ ব্যবহার করা যাবে না। তখন ব্যবহার করতে হবে দ্বিমাত্রিক গ্রাফ।



দ্বিমাত্রিক গতি বর্ণনার গ্রাফ
ক্যারম বোর্ডে ঘুঁটির নানাদিকে ছুটোছুটি, কিংবা কোনো সমতলে বক্রপথ বর্ণনার জন্য এই দ্বিমাত্রিক গ্রাফ ব্যবহার করা হবে। (যেমন এথলেটিক্স ট্র্যাকে বক্রপথে দৌড়ের গতিপথ বর্ণনার জন্য) তাছাড়া প্রোজেক্টাইল মোশন বর্ণনার জন্য এই দ্বিমাত্রিক গ্রাফ ব্যবহার করা হবে।


ত্রিমাত্রিক গতি বর্ণনার গ্রাফ।


আর উপরের চিত্রটা হচ্ছে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা এই তিন ডিমেনশানেই (তিন মাত্রাতেই) যে গতিপথ বিস্তৃত সেটার গতিপথ বর্ণনার গ্রাফ। নিচের তলটাকে ( x ও z অক্ষ মিলে যে তলটা গঠন করেছে ) আমরা বিমানবন্দরের রানওয়ে ধরি। এই রানওয়েতে বিমানের নানা দিকে ছুটোছুটিকে সংশ্লিষ্ট x অক্ষ ও z অক্ষ বরাবর বিমান কতদূর গেল সেই হিসাব দিয়ে বর্ণনা করা যাবে। এবার আমাদের প্লেন যখনই আকাশে উঠবে এবং আকাশে নানাদিকে উড়বে তখন এর গতির বর্ণনার জন্য  x  ও  z  অক্ষের পাশাপাশি উচ্চতা প্রকাশক  y  অক্ষের হিসাব-নিকাশ ও যুক্ত হবে। আর তখনই এই গতিকে বলা হবে ত্রিমাত্রিক গতি।
ভেক্টর ও গতি সংক্রান্ত বিষয়াদির অধ্যায়ে আমরা যত ধরনের গতির কথা বলব এর সবই হবে একমাত্রিক। একমাত্রিক গতির ক্ষেত্রে সরণ, বেগ, ত্বরণ ইত্যাদির বর্ণনা থাকবে ঐ অধ্যায়ে। আর দ্বিমাত্রিক গতি অধ্যায়ে এসে আমরা আমাদের গতিপথে আরেকটা মাত্রা যুক্ত করব। ফলে সেটা হয়ে যাবে একটা সরলরেখায় গতির বদলে একটা সমতলে গতির বর্ণনা। মোদ্দা কথা তখন দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ এই দুটি মাত্রাই হিসাব-নিকাশে যুক্ত হবে।
একটু আগে Projectile Motion এর কথা বলেছিলাম।
সংজ্ঞাটা হলঃ কোনো বস্তুকে যদি আনুভুমিকের সাথে তীর্যকভাবে নিক্ষেপ করা হয় এবং সেই বস্তুটা যদি শুধু মাত্র অভিকর্ষ বলের অধীনে বক্রপথে চলে তবে সেই ধরনের গতি (motion) কে প্রোজেক্টাইল মোশন বলে। আর যে পথে প্রোজেক্টাইল মোশন হয় সেই গতিপথকে বলে ট্র্যাজেক্টরী (trajectory).
একটা কথা লক্ষ্যনীয় যে প্রোজেক্টাইল মোশনের ক্ষেত্রে গতির শুরুতে শুধুমাত্র একবার বস্তুকে বল প্রয়োগ করে গতিশীল করা হবে এবং এরপর এর উপর শুধু অভিকর্ষ বল ছাড়া অন্য কোনো বল কাজ করবে না। শুধুমাত্র ‘g’ ত্বরণ এখানে কাজ করবে। এটা ধ্রুব ত্বরণে গতির একটা উদাহরণ। আমরা ধরে নেই যে এক্ষেত্রে বাতাসের বাধা নগন্য। তীর্যকভাবে ছোঁড়া একটি পাথরের গতি, বন্দুক বা কামান থেকে ছোঁড়া গোলার গতি ইত্যাদি এর উদাহরণ। একটা প্রোজেক্টাইল মোশন থেকে আমাদের অনেক কিছু বের করার আছে এবং বিবেচনা করার আছে। যেমনঃ
  • নিক্ষেপণ বেগ (যে বেগে নিক্ষেপ করা হয়)
  • নিক্ষেপণ কোণ (যে কোণে নিক্ষেপ করা হয়)
  • সঞ্চারপথ (ট্র্যাজেক্টরী / trajectory, যে পথে বস্তুটা ভ্রমন করে)
  • নিক্ষেপণ বিন্দু (যে বিন্দু থেকে নিক্ষেপ করা হয়)
  • বিচরণকাল / ভ্রমনকাল (যে সময় ধরে এটা গতিপথে থাকে অর্থাৎ যে সময় ধরে এটা ভ্রমন করে)
  • পাল্লা (অনুভুমিকভাবে যতদূর অতিক্রম করে)
  • সর্বাধিক উচ্চতা (একটা নির্দিষ্ট বেগে ছুঁড়লে এটা সর্বাধিক কত উঁচু উঠবে) ইত্যাদি
এদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা ও ব্যাখ্যা সংশ্লিষ্ট লেকচারেই দেয়া হবে।আপাতত এ ধরনের গতির উদাহরণ হিসেবে নিচের ছবিগুলো দেখলে আরেকটু ধারনা হবে।


অনুভূমিকের সাথে বিভিন্ন কোণে নিক্ষিপ্ত বস্তু।




প্রোজেক্টাইল মোশনের সাথে জড়িত বিষয়াদি




পানির প্যারাবোলিক ট্র্যাজেক্টরি।


আমরা এই অধ্যায়ে আরো যে কয়টা বিষয় নিয়ে পড়ব তার মধ্যে একটা হচ্ছে বৃত্তাকার গতি। নিচের চিত্রটার দিকে তাকাই।


বৃত্তাকার গতি।


গাঢ় নীল বস্তুটার বৃত্তাকার গতি লক্ষ্য করলে দেখব যে এখানে প্রতি মূহুর্তে গতির দিক পরিবর্তন হচ্ছে। আমরা যখন ভালভাবে আগের অধ্যায়গুলো পড়ে আসব এবং ভেক্টর সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকবে তখন এটা আমরা জেনে যাব যে বেগের পরিবর্তনের সাথে এর দিকের পরিবর্তনের ব্যাপারটাও জড়িত। বেগের মানের পরিবর্তন না হলেও শুধুমাত্র দিকের পরিবর্তন হলেই বেগের পরিবর্তন হয়।আর যেহেতু এখানে প্রতিমূহুর্তে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে সেহেতু এখানে প্রতিমুহুর্তে একটা ত্বরণ কাজ করছে। চিত্রে লাল রঙ এর  v  ভেক্টর চিহ্ন দিয়ে বেগ এবং নীল রঙ এর a ভেক্টর দিয়ে ত্বরণ বোঝানো হয়েছে। বৃত্তাকার পথে বস্তুর গতি নিয়ে যখন আমরা পড়ব তখন এটা আরো ভালভাবে বুঝতে পারব। তাছাড়া বৃত্তাকার গতির বিস্তারিত নিয়ে পরবর্তীতে একটা অধ্যায়ও আছে।


বৃত্তাকার গতির উদাহরণ।


আরেকটা আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আপেক্ষিক বেগ। এটা নিয়ে আপাতত আর বেশি কথা না বলে শুধু চিত্রগুলো দেখে ধারনা নেই। আমি মূল থিমটা বলছি। সেটা হচ্ছে একটা ট্রেনে দাঁড়িয়ে একজন একটা বল ছুঁড়েছে। আর রেললাইনের পাশে আরেকজন দাঁড়িয়ে আছে। ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি ট্রেনের ভিতর একটা বলকে তার সাপেক্ষে ৫ মিটার/সেকেন্ড বেগে ছুঁড়ল। ট্রেনটা ভুমির সাপেক্ষে ১০ মিটার/সেকেন্ড বেগে চলছে। এখন ভুমিতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যাক্তি তার সাপেক্ষে বলের বেগ কত মাপবে? এখানে দুটি চিত্র আছে। একটিতে বল আর ট্রেন একই দিকে চলছে।  অন্যটিতে বল আর ট্রেন বিপরীত দিকে চলছে। উল্লেখ্য বল আর ট্রেনের গতিপথ এখানে সরল রৈখিক।


বল আর ট্রেন একই দিকে গতিশীল



ট্রেন ও বল পরস্পর বিপরীত দিকে গতিশীল।

আপেক্ষিক বেগের ক্ষেত্রে আমার আরেকটা জিনিস আলোচনা করার ইচ্ছা আছে। সেটার চিত্রটা নিচের মত। এখানে গতিশীল দুটা বল দুটি ভিন্ন দিকে ভিন্ন সরলরেখা বরাবর গতিশীল। এদের ক্ষেত্রে একটার সাপেক্ষে আরেকটার আপেক্ষিক বেগের হিসাব কিভাবে হবে সেটাও আমরা আলোচনা করব। যেটা লক্ষ্য করার বিষয় সেটা হচ্ছে এ ক্ষেত্রে কিন্তু দুটি বলের বেগের দুইটি ভিন্ন দিক এবং এই দিক দুটি পরস্পর কোণ (এক্ষেত্রে ১৮০কোণ নয়।আগের চিত্রটিতে ট্রেন ও বলের বেগের দিক ছিল ১৮০ ডিগ্রি কোণ করে, আর তার আগের চিত্রে তা ০) করে আছে। আমি ধারনা করছি ভেক্টর সম্পর্কে ভাল ধারনা না রাখা কেউ আপাতত এই চিত্র বুঝবে না।


আপেক্ষিক বেগ

শেষ করার আগে একটা কথা মনে করিয়ে দেই যেটা আসলে আগের লেকচারেই বলা উচিত ছিল। আমরা দৈনন্দিন জীবনে গতি (motion) এবং বেগ (velocity) অনেকটা একই অর্থে ব্যবহার করি। কিন্তু ফিজিক্সের ভাষায় এদের মধ্যে পার্থক্য আছে। ফিজিক্সে বেগ বললে বুঝতে হবে এখানে গতির মানের পাশাপাশি দিকটাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।

0 মন্তব্য(গুলি) to পদার্থবিদ্যা-লেকচার ৩ (দ্বিমাত্রিক গতি অধ্যায়ে কি কি থাকছে)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Ads

Social Icons

Featured Posts