উসাইন বোল্ট খুব ভাল দৌড়াতে পারে। আমিও খুব ভাল দৌড়াতে পারি। এখন হঠাৎ করে কোন এক চাপাবাজিতে আমি বলে বসলাম আমি বোল্টের চেয়েও ভাল দৌড়াতে পারি। তুমি বললে আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে জামাইকা গিয়ে উসাইন বোল্টের সাথে একটা দৌড় দিয়ে আসেন। আমি বললাম না, তুমি ওকেই এখানে নিয়ে আস। এর কোনোটাই আপাতত সম্ভব না। তাই তুমি একটা বুদ্ধি বের করলে। বললে এক কাজ করা যাক। উসাইন বোল্টের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড টাইমিং
তো আমরা জানি। তুমি বাংলাদেশেই আমাকে দৌড়াতে বললে এবং বলে দিলে যে ঐ রেকর্ডটা ভাংতে হবে। ১০০ মিটার রেসে বোল্টের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড টাইমিংটা হচ্ছে ৯.৫৮ সেকেন্ড। অর্থাৎ আমাকে ৯.৫৮ সেকেন্ডের কম সময়ে ১০০ মিটার দৌড়াতে হবে। তুমি আরো কিছু হিসাব করলে। যেমন ১০০ মিটার যেতে সময় লাগে ৯.৫৮ সেকেন্ড। তাহলে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে হিসাবটা আসে ১০০/৯.৫৮=১০.৪৪ মিটার করে। কোনো সেকেন্ডে হয়ত এর চেয়ে বেশি আবার কোনো সেকেন্ডে হয়ত এর চেয়ে কম হতে পারে তবে গড়টা হচ্ছে  ১০.৪৪  মিটার/সেকেন্ড। উসাইন বোল্টের চেয়ে নিজেকে ভাল প্রমাণ করতে হলে আমাকে পুরো ১০০ মিটার ৯.৫৮ সেকেন্ডের কমে দৌড়ে এই গড়টা যত পারা যায় বেশি করতে হবে।দাঁড়াও, দাঁড়াও, দাঁড়াও …তুমি কি খেয়াল করেছ?

বোল্টের দৌড়, রেকর্ড টাইমিং, প্রতি সেকেন্ডে গড়ে কতটুকু দূরত্ব যাওয়া হচ্ছে ইত্যাদি এই হিসাবগুলো করতে করতে তুমি কিন্তু গতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো ফিজিক্সের দৃষ্টিভঙ্গিতে কিভাবে সামলাতে হয় সেই প্রক্রিয়াটুকুই শুরু করে দিয়েছ। প্রথমে হিসাব করলে ১০০মিটার দূরত্ব। নির্দিষ্ট দিকে এই দূরত্বকে আমরা বলি সরণ। ‘নির্দিষ্ট দিক’!? – মানে সরণ একটা ভেক্টর রাশি। এরপর এই দূরত্ব যেতে কত সময় লাগল সেই হিসাব করলে। ৯.৫৮ সেকেন্ড। তারপর ১০০/৯.৫৮=১০.৪৪ মিটার/সেকেন্ড; এই হিসাবটা করে একেবারে গড়বেগটাই বের করে ফেললে। গতি সংক্রান্ত বিষয়ে মোটামুটি একটা পাকা হিসাব-নিকাশ। সরণ এবং বেগের হিসাবের পর আসবে বেগের পরিবর্তনের হিসাব, অর্থাৎ ত্বরণ। বেগ বাড়তেও পারে, কমতেও পারে।অর্থাৎ ধণাত্বক ত্বরণ এবং ঋণাত্বক ত্বরণ দুটোই হতে পারে। সরণ এবং বেগও ধণাত্বক এবং ঋণাত্বক হতে পারে। এখানে দিকটা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো একটা দিককে ধণাত্বক ধরলে এর অপর দিকটাকে আমরা ঋণাত্বক ধরব। পড়া শুরু করলেই এটা বিস্তারিত বোঝা যাবে। এরপর আছে সময়ের সাপেক্ষে অবস্থান, বেগ, ত্বরণ এদের গ্রাফ আঁকা। এবং গ্রাফ দেখেই বলে দেয়া যে ঐ সময় এটা কোথায় অবস্থান করছিল, বেগ কত ছিল, ত্বরণ কত ছিল ইত্যাদি।

উসাইন বোল্টের দৌড়ের প্রথম কয়েক সেকেন্ড কিন্তু সে প্রতি সেকেন্ডে ১০.৪৪ মিটার করে যায় নি। প্রথমে তাকে শুন্য থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে বেগ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। আমরা যেটা করেছি সেটা হচ্ছে মোট অতিক্রান্ত দূরত্বকে মোট অতিক্রান্ত সময় দিয়ে ভাগ দিয়ে একটা গড় হিসাব করেছি।কিন্তু এই গড় হিসাব পুরো দৌড়টার সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো ধারণা দিচ্ছে না। যেমন তাকে শুন্য থেকে যাত্রা শুরু করে আস্তে আস্তে বেগ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। বেগ বৃদ্ধি পেয়ে একটা পর্যায়ে পৌঁছুলে সেই বেগটাকে ঠিক রেখে দৌড় চালিয়ে যেতে হয়েছে। তারপর শেষ চল্লিশ মিটারে হয়ত হঠাৎ করে বেগ বৃদ্ধি করে বাকী সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে হয়েছে। তাহলে আমরা দেখলাম পুরো ১০০ মিটার দৌড়ের ৯.৫৮ সেকেন্ড সময়ে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে যেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা আমরা গড়বেগ  ‘১০.৪৪ মি./সে.’  শুধু এই তথ্য থেকে পাচ্ছি না। কোনো একটা নির্দিষ্ট সময়ে তার বেগ ঠিক কত ছিল ( তাৎক্ষণিক বেগ ),  ঐ মুহুর্তে কি কোনো ত্বরণ ছিল ( মানে বেগের পরিবর্তন হচ্ছিল কিনা ) এই ধরনের অনেক তথ্যই আমাদের জানতে হবে।সেটা কিভাবে? তার জন্য আমাদের এই অধ্যায় পড়তে হবে।

আমরা এখানে গড়বেগ ১০.৪৪ মি./সে. হিসাব করেছি। একটা বস্তু আগে থেকে ১০.৪৪ মি./সে. ধ্রুববেগে সোজাপথে ( ‘ধ্রুববেগ’, ‘সোজাপথে’ এই শব্দগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ) চলছিল। কোনো একটা পর্যায় থেকে আমরা সময় হিসাব করা শুরু করলাম এবং ৯.৫৮ সেকেন্ডে এসে থামলাম। আমরা খেয়াল করে দেখব যে ১০.৪৪×৯.৫৮=১০০.০১৫২, প্রায় ১০০ মিটার। কিন্তু উসাইন বোল্ট তো আগে থেকে ১০.৪৪ মি./সে. গড় বেগে চলছিল না।তাকে শুন্য থেকে দৌড় শুরু করে বেগ বৃদ্ধি করতে হয়েছে। সেটা কখনো ১০.৪৪ মি./সে. থেকে বেশি বা কখনো কমও হতে পারে। সেও ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড় শেষ করেছে। কিন্তু তারপরো উসাইন বোল্টের দৌড়ের সিনারি,  আর আগে থেকে ১০.৪৪ মি./সে. ধ্রুববেগে চলা বস্তুর ৯.৫৮ সেকেন্ডে ১০০ মিটার অতিক্রমের সিনারী কিন্তু এক না। এই দুই ঘটনার পার্থক্যটা আমরা ভালো করে বুঝতে পারব গতি সংক্রান্ত অধ্যায় শেষ করার পর।

এখানে আমরা যা কিছু পড়ব সেটার সবটুকুই হবে ক্যালকুলাস ছাড়া। একটু আগে বেগের পরিবর্তন বলে একটা কথা বলা হয়েছিল। প্রতি মুহুর্তে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে এমন একটা বস্তুকে নিয়ে হিসাব নিকাশের সময় আমাদের এর তাৎক্ষণিক বেগ সম্পর্কে জানতে হবে। আর বলের পরিবর্তন হলে ত্বরণের পরিবর্তনও হয়। আর ত্বরণেরও যেহেতু পরিবর্তন হতে পারে সেহেতু তাৎক্ষনিক ত্বরণের হিসাবটাও লাগবে। এই কোর্সে আমরা তাৎক্ষনিক বেগ এবং তাৎক্ষনিক ত্বরণ কি সেটা সম্পর্কে ধারনা নিলেও সেটা হিসাব করতে শিখব না। আরেকটু বড় হলে,মানে ক্যালকুলাস শিখলে তাৎক্ষণিক বেগ ও তাৎক্ষনিক ত্বরণও আমরা হিসাব করতে পারব।

একটু আগে অবস্থান, বেগ, ত্বরণ সম্পর্কিত যে গ্রাফগুলোর কথা বলেছি সেগুলো কেমন তা একটু দেখি। এখানে সময়কে সব সময় x অক্ষে এবং অবস্থান, বেগ, ত্বরণ ইত্যাদিকে y অক্ষে প্লট করা হয়। আমরা দুইটা কেইস হিসাব করব। প্রথম কেইসটা হচ্ছে বস্তুটা বিনা ত্বরণে অর্থাৎ শুন্য ত্বরণে চলছে। এর বেগ হচ্ছে ২মি./সে।
s=vt (v=2)
চিত্রঃ s=vt গ্রাফ।

v=2
চিত্রঃ v=2 গ্রাফ।কারণ সময়ের সাথে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে না।
a=0
চিত্রঃ a=0 গ্রাফ।কারণ এই উদাহরণে ত্বরণ সর্বদা শুন্য।
উপরের গ্রাফ এবং উদাহরণে বেশি কিছু না বলে শুধু  ‘০’  ত্বরণে ২মি./সে. বেগে চলা একটা বস্তুর সময়ের সাপেক্ষে বিভিন্ন অবস্থান,বেগ ও ত্বরণের গ্রাফ আঁকা হয়েছে। এবার আমরা আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করব। সেটা হচ্ছে বস্তুটি ২ মি./সে. বেগেই চলছে। কিন্তু এর ১মি./সে. হারে ত্বরণ ও হচ্ছে।
s=2t+.5t^2
চিত্রঃ s=ut+.5at2 সমীকরণের গ্রাফ।
v=2+t
চিত্রঃ v=u+at সমীকরণের গ্রাফ।
a=1
চিত্রঃ a=1 সমীকরণের গ্রাফ।
আগেই বলা হয়েছে এই লেকচারে আমরা বিস্তারিত কিছু পড়ব না। শর্টকাটে পুরো অধ্যায়ের পড়াশুনা সম্পর্কে ধারনা নেব। ( ট্রেইলার আর কি! ) পড়াশুনায় কোনো শর্টকাট নেই। তাই আমি ধারনা করছি শর্টকাটে ধারনা দিতে গিয়ে ইতিমধ্যেই অনেক বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।পুরো অধ্যায়ের পড়া ভালভাবে শেষ করলে আশাকরি এই বিভ্রান্তি আর থাকবে না। ধন্যবাদ সবাইকে।

0 মন্তব্য(গুলি) to গতি সংক্রান্ত বিষয়াদিঃ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.

Ads

Social Icons

Featured Posts