আজকের লেকচারের বিষয় ‘আমাদের কোর্সের পরিসরঃ বৃত্তাকার গতি, কৌণিক গতি,
ঘর্ষণ।’ লেকচারের শুরুতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের একটা কথা বলে রাখি।
বৃত্তাকার গতি এবং কৌণিক গতি সম্পর্কে আমাদের দেশে স্কুল পর্যায়ে পড়ানো হয়
না। তবে অন্য অনেক দেশে স্কুল পর্যায়েই তা পড়ানো হয়। তাই আমি স্কুলের
ফিজিক্সের এই কোর্সে তা পড়াব। তবে যারা একেবারেই শুরুর দিকের শিক্ষার্থী
তারা হঠাৎ করেই এই বিষয়গুলো নাও বুঝে উঠতে পারে। কারণ
ভেক্টর, সরলরৈখিক গতির অধ্যায় গুলো ঠিকমত শেষ না করার আগে বৃত্তাকার গতির ফিজিক্স বোঝা যাবে না। এই লেকচারে আমি তা করছিও না। যেটা করছি সেটা হচ্ছে একটু আইডিয়া দেয়া যে এই অধ্যায়ের পড়াগুলো কি নিয়ে এবং এগুলো কেমন হতে পারে। আর দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব কিছু উদাহরণ মনে করিয়ে দিয়ে বৃত্তাকার গতি সম্পর্কিত পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা।
বৃত্তাকার গতি সম্পর্কে একটু ধারণা আমাদের ইতিমধ্যে হয়েছে। মনে করিয়ে দেইঃ গাড়ির বৃত্তাকার পথে চলা, একটা সূতার আগায় পাথর বেঁধে সূতার অন্যপ্রান্তে ধরে বৃত্তাকার পথে পাথরটাকে ঘুরানো ইত্যাদি বৃত্তাকার গতির উদাহরণ। বৃত্তাকার পথে চলা কোনো বস্তুর গতিই বৃত্তাকার গতি। বৃত্তাকার গতি অধ্যায়ে আমরা একটা বস্তুর বৃত্তাকার গতিকে পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে কিভাবে দেখা হয়, কিভাবে সংশ্লিষ্ট হিসাবগুলো করা হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো শিখব।
চিত্রঃ বৃত্তাকার গতির ক্ষেত্রে বৃত্তাকার পথে অতিক্রান্ত দূরত্ব (s), কৌণিক দূরত্ব (θ) , বৃত্তপথের ব্যাসার্ধ (r)
বৃত্তাকার গতি পড়া শুরু করার আগে একটা কথা আবার একটু মনে করে নিতে হবে। আমরা জানি বেগের পরিবর্তণের হার হল ত্বরণ। বেগের (Velocity) কথা যেহেতু বলা হয়েছে তাই সাথে সাথেই এটা মাথায় এনে ফেলতে হবে এখানে বেগের মানের (speed) সাথে দিকটাও জড়িত। তাই বেগের পরিবর্তন মানে কিন্তু শুধু এর মানের (স্পিড) পরিবর্তন না। বেগের মানের পরিবর্তন না হয়ে শুধু দিকের পরিবর্তন হলেও ত্বরণ হবে। কাজেই একটা বস্তু যখন বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে তখন প্রতি মুহুর্তে এর ত্বরণ হতে থাকে। বৃত্তাকার গতি সম্পর্কে পড়তে গেলে সেটা আরো ভালো ভাবে চোখে পড়বে।
ধরা যাক আমরা বাসে ভ্রমন করছি। বাসটা যখন ধ্রুব বেগে (constant velocity) চলছে আমাদের শরীর সেই ধ্রুব বেগটা ধরতে পারে না। কিন্তু যখনই বেগের পরিবর্তন হয় (মানে ত্বরণ হয়) তখন আমরা বাইরে না তাকিয়েও বা চোখ বন্ধ রেখেও বুঝতে পারি ত্বরণ হচ্ছে। যখনই বাসটা একটু স্লো হয়ে আসে তখন আমরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ি। আবার বাসটার বেগ যখন বৃদ্ধি পায় তখন আমরা পেছনে হেলে পড়ি। এই দুটা ঘটনা অবশ্য বৃত্তাকার গতির সাথে জড়িত বিষয় না। তবে এই উদাহরণটা দেবার একটা কারণ আছে। এই হেলে পড়া বা ঝুঁকে পড়া থেকে আমরা বুঝতে পারি ত্বরণ হচ্ছে।
এবার অন্য একটা জিনিস কল্পনা করতে বলি। ধরা যাক বাসটা চলন্ত অবস্থায় কোনো একটা দিকে বাঁক নিচ্ছে,অর্থাৎ বৃত্তাকার পথে চলছে। তখন বাসটা যেদিকে বাঁক নেয় তার বিপরীত দিকে আমরা হেলে পড়ি। এখন বাসটা বাঁক নেবার সময় বাঁকের কেন্দ্রের বিপরীত দিকে হেলে পড়ার ঘটনা থেকেও আমরা ধারনা করতে পারি যে এখানে ত্বরণ হচ্ছে। আসলেই তাই। বৃত্তাকার পথে চলার সময় কোনদিকে কিভাবে ত্বরণ হচ্ছে, সেটা আমরা কিভাবে হিসাব করি এগুলা ভাল ভাবে বোঝার জন্য বৃত্তাকার গতি অধ্যায়টা পড়া শেষ করতে হবে।
আরো কিছু বাস্তব ঘটনার কথা বলা যায়। যেমন বাঁকের মুখে ঘোরার সময় সাইকেলটা বৃত্তাকার পথের কেন্দ্রের দিকে হেলে পড়ে, বৃত্তাকার পথে দৌড়ের সময়ও আমরা কেন্দ্রের দিকে হেলে পড়ি, গাড়ি চলাচলের বৃত্তাকার রাস্তা বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে খানিকটা ঢালু করে বানানো হয়। এই ঘটনাগুলোর পেছনের পদার্থবিজ্ঞান বুঝতে হলেও আমাদের বৃত্তাকার গতি অধ্যায়টা পড়তে হবে।
ঘর্ষণ নিয়েও আগের একটা লেকচারে একটু ধারনা দেয়া হয়েছে। আমার হাতটা আমি টেবিলের উপর রেখে টেবিলের তল বরাবর হাতটাকে ঘষে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি। হাতের গতির বিরুদ্ধে যে বলটা অনুভব করব সেটাই ঘর্ষণ। বইটাকে টেবিলের উপর রেখে একটু ঠেলে দেই। দেখব বইটা একটু দূর গিয়ে থেমে গেছে। আমার হাত বইটার উপর অল্প সময়ের জন্য বল প্রয়োগ করে এটাকে গতিশীল করে দিয়েছিল। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে ঘর্ষণ বল বইটাকে একটু পরেই থামিয়ে দিয়েছে। আমাদের চারপাশেই এই ঘর্ষণ বল আছে। আমার সাইকেল বা গাড়িটাকে যেমন গতিশীল করার প্রয়োজন আছে তেমনি এটাকে একসময় থামানোরও দরকার আছে। আমরা থামানোর কাজে কৌশলে এই ঘর্ষণ বলকেই ব্যবহার করে থাকি। আমরা যখন বরফ বা বরফের মত পিচ্ছিল কোনো তলের উপর দিয়ে হাঁটতে যাই তখন বার বার পিছলে যাই। কিন্তু খসখসে বা অমসৃণ কোনো তলের উপর হাঁটতে গেলে এই সমস্যা হয় না। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় কেন ঘর্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।
যাদের একটু সংজ্ঞাপ্রীতি আছে তাদের জন্য ঘর্ষণের সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যায়ঃ
কোনো তল অপর একটি তলের সংস্পর্শে থেকে যখন তলটির সাপেক্ষে গতিশীল হয় বা হওয়ার চেষ্টা করে, তখন এক তল অপর তলের গতির বিরুদ্ধে বা গতির চেষ্টার বিরুদ্ধে যে বল প্রয়োগ করে তাকে ঘর্ষণ বলে। দুটি বস্তুর যে অংশদুটি পরস্পরের সংস্পর্শে থাকে তাকে তাদের স্পর্শতল বলা হয়।
দুই প্রকার ঘর্ষণ আছে। স্থিতি ঘর্ষণ ও চল ঘর্ষণ। দুই প্রকার ঘর্ষণ নিয়েই সামনে আলোচনা করা হবে।
আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা হল, দুটি বস্তু মসৃন হলে ঘর্ষণ কম হয় এবং অমসৃণ হলে ঘর্ষণ বেশী হয়। কোনো তলকে আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত মসৃণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু শক্তিশালী আতস কাঁচ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় ঐ তলও একেবারেই মসৃন নয়, খাঁজ কাটা কাটা। সুতরাং দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থাকলে তারা পরস্পরের খাঁজে খাঁজে আটকে গিয়ে ঘর্ষণের সৃষ্টি করে। নিচের ছবিটা দেখলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে।
একটা বস্তু বৃত্তাকার পথে অনবরত ঘুরছে। এভাবে চলতে গিয়ে সে বস্তুটা আসলে একই বৃত্তাকার পথকে বার বার অতিক্রম করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। সিডি-ডিভিডি প্লেয়ারে সিডি চলার সময় সিডি-ডিভিডির চাকতিটা আসলে ঘুরতে থাকে। সিডি প্লেয়ারে দেবার আগে সিডিটার উল্টাদিকে কাগজের উপর আগে থেকে কলম বা পেন্সিল দিয়ে একটা ফোঁটা দিয়ে নেই। চালু করার পর দেখব ঐ ফোঁটাটা একই বৃত্তাকার পথে বার বার ঘুরে আসছে। বৃত্তাকার পথের কেন্দ্র এবং কেন্দ্র থেকে ঐ ফোঁটাটার দূরত্ব (মানে বৃত্ত পথের ব্যাসার্ধ) এখানে গুরুত্বপূর্ণ। নানা হিসাব-নিকাশে বার বার এটা লাগবে। কতবার ঘুরল, এক পূর্ণ ঘূর্ণনের কতটুকু ঘুরল, কত সময়ের ভেতর কতটুকু ভগ্নাংশ ঘুরল এই হিসাবগুলো এখানে জড়িত। পুরো একবার ঘুরে আসলে সেটাকে বলি ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরেছে। দুইবার ঘুরলে সেটাকে বলি ২×৩৬০ ডিগ্রী ঘুরেছে। এভাবেই বাকী হিসাবগুলো হবে। ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরল না ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরল সেটাও দেখার বিষয়। আবার বস্তুটা একটা ঘুর্ণনের পুরোটাই না ঘুরে এক পূর্ণ ঘুর্ণনের কোনো একটা ভগ্নাংশ পর্যন্ত ঘুরে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সব হিসাবই হবে কৌণিক পরিমাপে। এতক্ষনে ধরে ফেলার কথা আমরা আসলে আগের কাজটাই করছি কিন্তু সরলরৈখিক দূরত্ব এর যায়গায় কৌণিক দূরত্ব দিয়ে হিসাবগুলো করছি। নিচের ছবিটা দেখলে বুঝতে সুবিধা হবে।
কোণ পরিমাপের ক্ষেত্রে ডিগ্রীর বদলে রেডিয়ান দিয়ে হিসাব করা হয় বেশিরভাগ সময়। উপরের চিত্রটাতেও তাই করা হয়েছে। রেডিয়ান কোণ বুঝতে নবম-দশম শ্রেনীর উচ্চতর গণিত বইটা খুলে দেখতে হবে। তবে এই কোর্সে পড়ানোর সময়ও সেটা নিয়ে ধারণা দেবার ইচ্ছা আছে। অপেক্ষা করতে হবে।
সরলরৈখিক ক্ষেত্রে যেমন বেগ-ত্বরণ হিসাব করি, কৌণিক ক্ষেত্রেও আমরা সেই হিসাবগুলো করি। নিচের চার্টটা খেয়াল করি।
ইংরেজী কথাগুলোর বাংলা মানে,
Linear and Angular measures: সরলরৈখিক এবং কৌণিক পরিমাপ
Quantity: পরিমান
Linear: সরলরৈখিক
Angular: কৌণিক
Relationship: সম্পর্ক
Displacement: সরণ
Velocity: বেগ
Acceleration: ত্বরণ
সরলরৈখিক বেগ হিসাবের সময় আমরা যেমন অতিক্রান্ত দূরত্বকে সময় ব্যবধান দিয়ে ভাগ দিয়েছি্, ত্বরণ হিসাবের সময় বেগের পরিবর্তনকে সময় ব্যবধান দিয়ে ভাগ দিয়েছি কৌণিক বেগের ক্ষেত্রে অনেকটা একই কাজ হবে। শুধু সরলরৈখিক সরণের পরিবর্তে কৌণিক সরণ ব্যবহার করা হবে। উপরের চার্টের সম্পর্কগুলো কিভাবে কি হল সেগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলতে হবে। তাছাড়া এধরনের গতির ক্ষেত্রেও নিউটনের সূত্রগুলো ভিন্ন রূপে প্রযোজ্য। এক লেকচারে সব বলা যাবে না। এই লেকচারে শুধু আমরা কৌণিক বেগের পড়াশুনা কেমন হতে পারে তার একটা ধারনা নিলাম। আরো কিছু বিষয় আছে। ঠিক কখন একটা বস্তু ঘুরবে? আমার কাছে একটা লম্বা কাঠের দন্ড আছে। এই দন্ডটাকে আমরা ঘুরাতে চাই। এজন্য ঠিক কিভাবে কেমন করে বল প্রয়োগ করতে হবে সেটা আমাদের জানা লাগবে। সেটাও আমরা জানব এই অধ্যায়ে। নিচের ছবিটার দিকে তাকাই।
একটা দরজা আমরা কিভাবে খুলি? দরজার উপর বল প্রয়োগ করতে হয়। কিভাবে কোন দিকে বল প্রয়োগ করলে খুব সহজে দরজাটা খোলা যায়? ছবিটার দিকে তাকাই। দরজাটা যে অক্ষ বরাবর ঘুরছে সেটা থেকে যতদুর করে পারা যায় বল প্রয়োগ করতে হয়। দরজা ধরে ঠেলার নবটা দরজার ঘুর্ণন অক্ষ থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা হয়। দরজার নব ধরে দরজার উপর লম্বভাবে কিংবা যতটা সম্ভব লম্বভাবে বল প্রয়োগ করতে হয়। আমরা বুঝলাম যে দরজার উপর প্রয়োগ করা বলের পরিমান, বলটা ঘূর্ণন অক্ষ থেকে কতটা দূরে করে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং বলটা কোন দিকে প্রয়োগ করা হয়েছে এই বিষয়গুলোই এখানে ঠিক করে দেয় কত কম কষ্ট করে দরজাটা খোলা বা বন্ধ করা যাবে। এই বিষয়টা আরো ভালভাবে বলা যাবে যখন আমরা ঘুর্ণন গতির সাথে জড়িত বিষয়গুলো পড়ব।
ভেক্টর, সরলরৈখিক গতির অধ্যায় গুলো ঠিকমত শেষ না করার আগে বৃত্তাকার গতির ফিজিক্স বোঝা যাবে না। এই লেকচারে আমি তা করছিও না। যেটা করছি সেটা হচ্ছে একটু আইডিয়া দেয়া যে এই অধ্যায়ের পড়াগুলো কি নিয়ে এবং এগুলো কেমন হতে পারে। আর দৈনন্দিন জীবনের বাস্তব কিছু উদাহরণ মনে করিয়ে দিয়ে বৃত্তাকার গতি সম্পর্কিত পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করা।
বৃত্তাকার গতি সম্পর্কে একটু ধারণা আমাদের ইতিমধ্যে হয়েছে। মনে করিয়ে দেইঃ গাড়ির বৃত্তাকার পথে চলা, একটা সূতার আগায় পাথর বেঁধে সূতার অন্যপ্রান্তে ধরে বৃত্তাকার পথে পাথরটাকে ঘুরানো ইত্যাদি বৃত্তাকার গতির উদাহরণ। বৃত্তাকার পথে চলা কোনো বস্তুর গতিই বৃত্তাকার গতি। বৃত্তাকার গতি অধ্যায়ে আমরা একটা বস্তুর বৃত্তাকার গতিকে পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গিতে কিভাবে দেখা হয়, কিভাবে সংশ্লিষ্ট হিসাবগুলো করা হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো শিখব।
বৃত্তাকার গতি পড়া শুরু করার আগে একটা কথা আবার একটু মনে করে নিতে হবে। আমরা জানি বেগের পরিবর্তণের হার হল ত্বরণ। বেগের (Velocity) কথা যেহেতু বলা হয়েছে তাই সাথে সাথেই এটা মাথায় এনে ফেলতে হবে এখানে বেগের মানের (speed) সাথে দিকটাও জড়িত। তাই বেগের পরিবর্তন মানে কিন্তু শুধু এর মানের (স্পিড) পরিবর্তন না। বেগের মানের পরিবর্তন না হয়ে শুধু দিকের পরিবর্তন হলেও ত্বরণ হবে। কাজেই একটা বস্তু যখন বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে তখন প্রতি মুহুর্তে এর ত্বরণ হতে থাকে। বৃত্তাকার গতি সম্পর্কে পড়তে গেলে সেটা আরো ভালো ভাবে চোখে পড়বে।
ধরা যাক আমরা বাসে ভ্রমন করছি। বাসটা যখন ধ্রুব বেগে (constant velocity) চলছে আমাদের শরীর সেই ধ্রুব বেগটা ধরতে পারে না। কিন্তু যখনই বেগের পরিবর্তন হয় (মানে ত্বরণ হয়) তখন আমরা বাইরে না তাকিয়েও বা চোখ বন্ধ রেখেও বুঝতে পারি ত্বরণ হচ্ছে। যখনই বাসটা একটু স্লো হয়ে আসে তখন আমরা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ি। আবার বাসটার বেগ যখন বৃদ্ধি পায় তখন আমরা পেছনে হেলে পড়ি। এই দুটা ঘটনা অবশ্য বৃত্তাকার গতির সাথে জড়িত বিষয় না। তবে এই উদাহরণটা দেবার একটা কারণ আছে। এই হেলে পড়া বা ঝুঁকে পড়া থেকে আমরা বুঝতে পারি ত্বরণ হচ্ছে।
এবার অন্য একটা জিনিস কল্পনা করতে বলি। ধরা যাক বাসটা চলন্ত অবস্থায় কোনো একটা দিকে বাঁক নিচ্ছে,অর্থাৎ বৃত্তাকার পথে চলছে। তখন বাসটা যেদিকে বাঁক নেয় তার বিপরীত দিকে আমরা হেলে পড়ি। এখন বাসটা বাঁক নেবার সময় বাঁকের কেন্দ্রের বিপরীত দিকে হেলে পড়ার ঘটনা থেকেও আমরা ধারনা করতে পারি যে এখানে ত্বরণ হচ্ছে। আসলেই তাই। বৃত্তাকার পথে চলার সময় কোনদিকে কিভাবে ত্বরণ হচ্ছে, সেটা আমরা কিভাবে হিসাব করি এগুলা ভাল ভাবে বোঝার জন্য বৃত্তাকার গতি অধ্যায়টা পড়া শেষ করতে হবে।
আরো কিছু বাস্তব ঘটনার কথা বলা যায়। যেমন বাঁকের মুখে ঘোরার সময় সাইকেলটা বৃত্তাকার পথের কেন্দ্রের দিকে হেলে পড়ে, বৃত্তাকার পথে দৌড়ের সময়ও আমরা কেন্দ্রের দিকে হেলে পড়ি, গাড়ি চলাচলের বৃত্তাকার রাস্তা বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে খানিকটা ঢালু করে বানানো হয়। এই ঘটনাগুলোর পেছনের পদার্থবিজ্ঞান বুঝতে হলেও আমাদের বৃত্তাকার গতি অধ্যায়টা পড়তে হবে।
ঘর্ষণ নিয়েও আগের একটা লেকচারে একটু ধারনা দেয়া হয়েছে। আমার হাতটা আমি টেবিলের উপর রেখে টেবিলের তল বরাবর হাতটাকে ঘষে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকি। হাতের গতির বিরুদ্ধে যে বলটা অনুভব করব সেটাই ঘর্ষণ। বইটাকে টেবিলের উপর রেখে একটু ঠেলে দেই। দেখব বইটা একটু দূর গিয়ে থেমে গেছে। আমার হাত বইটার উপর অল্প সময়ের জন্য বল প্রয়োগ করে এটাকে গতিশীল করে দিয়েছিল। কিন্তু বিপরীত দিক থেকে ঘর্ষণ বল বইটাকে একটু পরেই থামিয়ে দিয়েছে। আমাদের চারপাশেই এই ঘর্ষণ বল আছে। আমার সাইকেল বা গাড়িটাকে যেমন গতিশীল করার প্রয়োজন আছে তেমনি এটাকে একসময় থামানোরও দরকার আছে। আমরা থামানোর কাজে কৌশলে এই ঘর্ষণ বলকেই ব্যবহার করে থাকি। আমরা যখন বরফ বা বরফের মত পিচ্ছিল কোনো তলের উপর দিয়ে হাঁটতে যাই তখন বার বার পিছলে যাই। কিন্তু খসখসে বা অমসৃণ কোনো তলের উপর হাঁটতে গেলে এই সমস্যা হয় না। এই ঘটনা থেকেই বোঝা যায় কেন ঘর্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।
যাদের একটু সংজ্ঞাপ্রীতি আছে তাদের জন্য ঘর্ষণের সংজ্ঞা এভাবে দেয়া যায়ঃ
কোনো তল অপর একটি তলের সংস্পর্শে থেকে যখন তলটির সাপেক্ষে গতিশীল হয় বা হওয়ার চেষ্টা করে, তখন এক তল অপর তলের গতির বিরুদ্ধে বা গতির চেষ্টার বিরুদ্ধে যে বল প্রয়োগ করে তাকে ঘর্ষণ বলে। দুটি বস্তুর যে অংশদুটি পরস্পরের সংস্পর্শে থাকে তাকে তাদের স্পর্শতল বলা হয়।
দুই প্রকার ঘর্ষণ আছে। স্থিতি ঘর্ষণ ও চল ঘর্ষণ। দুই প্রকার ঘর্ষণ নিয়েই সামনে আলোচনা করা হবে।
আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা হল, দুটি বস্তু মসৃন হলে ঘর্ষণ কম হয় এবং অমসৃণ হলে ঘর্ষণ বেশী হয়। কোনো তলকে আপাতদৃষ্টিতে অত্যন্ত মসৃণ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু শক্তিশালী আতস কাঁচ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায় ঐ তলও একেবারেই মসৃন নয়, খাঁজ কাটা কাটা। সুতরাং দুটি বস্তু পরস্পরের সংস্পর্শে থাকলে তারা পরস্পরের খাঁজে খাঁজে আটকে গিয়ে ঘর্ষণের সৃষ্টি করে। নিচের ছবিটা দেখলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে।
একটা বস্তু বৃত্তাকার পথে অনবরত ঘুরছে। এভাবে চলতে গিয়ে সে বস্তুটা আসলে একই বৃত্তাকার পথকে বার বার অতিক্রম করে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। সিডি-ডিভিডি প্লেয়ারে সিডি চলার সময় সিডি-ডিভিডির চাকতিটা আসলে ঘুরতে থাকে। সিডি প্লেয়ারে দেবার আগে সিডিটার উল্টাদিকে কাগজের উপর আগে থেকে কলম বা পেন্সিল দিয়ে একটা ফোঁটা দিয়ে নেই। চালু করার পর দেখব ঐ ফোঁটাটা একই বৃত্তাকার পথে বার বার ঘুরে আসছে। বৃত্তাকার পথের কেন্দ্র এবং কেন্দ্র থেকে ঐ ফোঁটাটার দূরত্ব (মানে বৃত্ত পথের ব্যাসার্ধ) এখানে গুরুত্বপূর্ণ। নানা হিসাব-নিকাশে বার বার এটা লাগবে। কতবার ঘুরল, এক পূর্ণ ঘূর্ণনের কতটুকু ঘুরল, কত সময়ের ভেতর কতটুকু ভগ্নাংশ ঘুরল এই হিসাবগুলো এখানে জড়িত। পুরো একবার ঘুরে আসলে সেটাকে বলি ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরেছে। দুইবার ঘুরলে সেটাকে বলি ২×৩৬০ ডিগ্রী ঘুরেছে। এভাবেই বাকী হিসাবগুলো হবে। ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরল না ঘড়ির কাটার বিপরীত দিকে ঘুরল সেটাও দেখার বিষয়। আবার বস্তুটা একটা ঘুর্ণনের পুরোটাই না ঘুরে এক পূর্ণ ঘুর্ণনের কোনো একটা ভগ্নাংশ পর্যন্ত ঘুরে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে সব হিসাবই হবে কৌণিক পরিমাপে। এতক্ষনে ধরে ফেলার কথা আমরা আসলে আগের কাজটাই করছি কিন্তু সরলরৈখিক দূরত্ব এর যায়গায় কৌণিক দূরত্ব দিয়ে হিসাবগুলো করছি। নিচের ছবিটা দেখলে বুঝতে সুবিধা হবে।
কোণ পরিমাপের ক্ষেত্রে ডিগ্রীর বদলে রেডিয়ান দিয়ে হিসাব করা হয় বেশিরভাগ সময়। উপরের চিত্রটাতেও তাই করা হয়েছে। রেডিয়ান কোণ বুঝতে নবম-দশম শ্রেনীর উচ্চতর গণিত বইটা খুলে দেখতে হবে। তবে এই কোর্সে পড়ানোর সময়ও সেটা নিয়ে ধারণা দেবার ইচ্ছা আছে। অপেক্ষা করতে হবে।
সরলরৈখিক ক্ষেত্রে যেমন বেগ-ত্বরণ হিসাব করি, কৌণিক ক্ষেত্রেও আমরা সেই হিসাবগুলো করি। নিচের চার্টটা খেয়াল করি।
ইংরেজী কথাগুলোর বাংলা মানে,
Linear and Angular measures: সরলরৈখিক এবং কৌণিক পরিমাপ
Quantity: পরিমান
Linear: সরলরৈখিক
Angular: কৌণিক
Relationship: সম্পর্ক
Displacement: সরণ
Velocity: বেগ
Acceleration: ত্বরণ
সরলরৈখিক বেগ হিসাবের সময় আমরা যেমন অতিক্রান্ত দূরত্বকে সময় ব্যবধান দিয়ে ভাগ দিয়েছি্, ত্বরণ হিসাবের সময় বেগের পরিবর্তনকে সময় ব্যবধান দিয়ে ভাগ দিয়েছি কৌণিক বেগের ক্ষেত্রে অনেকটা একই কাজ হবে। শুধু সরলরৈখিক সরণের পরিবর্তে কৌণিক সরণ ব্যবহার করা হবে। উপরের চার্টের সম্পর্কগুলো কিভাবে কি হল সেগুলো ভেঙ্গে ভেঙ্গে বলতে হবে। তাছাড়া এধরনের গতির ক্ষেত্রেও নিউটনের সূত্রগুলো ভিন্ন রূপে প্রযোজ্য। এক লেকচারে সব বলা যাবে না। এই লেকচারে শুধু আমরা কৌণিক বেগের পড়াশুনা কেমন হতে পারে তার একটা ধারনা নিলাম। আরো কিছু বিষয় আছে। ঠিক কখন একটা বস্তু ঘুরবে? আমার কাছে একটা লম্বা কাঠের দন্ড আছে। এই দন্ডটাকে আমরা ঘুরাতে চাই। এজন্য ঠিক কিভাবে কেমন করে বল প্রয়োগ করতে হবে সেটা আমাদের জানা লাগবে। সেটাও আমরা জানব এই অধ্যায়ে। নিচের ছবিটার দিকে তাকাই।
একটা দরজা আমরা কিভাবে খুলি? দরজার উপর বল প্রয়োগ করতে হয়। কিভাবে কোন দিকে বল প্রয়োগ করলে খুব সহজে দরজাটা খোলা যায়? ছবিটার দিকে তাকাই। দরজাটা যে অক্ষ বরাবর ঘুরছে সেটা থেকে যতদুর করে পারা যায় বল প্রয়োগ করতে হয়। দরজা ধরে ঠেলার নবটা দরজার ঘুর্ণন অক্ষ থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা হয়। দরজার নব ধরে দরজার উপর লম্বভাবে কিংবা যতটা সম্ভব লম্বভাবে বল প্রয়োগ করতে হয়। আমরা বুঝলাম যে দরজার উপর প্রয়োগ করা বলের পরিমান, বলটা ঘূর্ণন অক্ষ থেকে কতটা দূরে করে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং বলটা কোন দিকে প্রয়োগ করা হয়েছে এই বিষয়গুলোই এখানে ঠিক করে দেয় কত কম কষ্ট করে দরজাটা খোলা বা বন্ধ করা যাবে। এই বিষয়টা আরো ভালভাবে বলা যাবে যখন আমরা ঘুর্ণন গতির সাথে জড়িত বিষয়গুলো পড়ব।
Unknown সরলরৈখিক গতি কে পর্যায়বৃত্ত গতি বলা হয়